ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা

131
Lathikhela
লাঠি খেলা

লাঠি খেলা এদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ভ্রাম্যমাণ পরিবেশনা শিল্প। গ্রামের সাধারণ মানুষেরা তাদের নৈমিত্তিক জীবনের উৎসব-বাংলা বর্ষ বরণ, বিবাহ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি অনুষ্ঠান উপলক্ষে লাঠি খেলার আয়োজন করে থাকেন। এক্ষেত্রে সাধারণত কোনো লাঠিয়াল দলকে ভাড়া করে আনা হয়। আর লাঠিয়াল দল তাদের দৈনন্দিন জীবনের পোশাকে বায়না পাওয়া গ্রামে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের ধ্বনি করে ডাক ভাঙতে থাকেন। তাদের সে ডাক ভাঙার শব্দ শুনে গ্রামের লোকজন তো বটেই আশে পাশের গ্রামগুলোতেও লাঠি খেলার সংবাদ রাষ্ট্র হয়ে যায়।

গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশু, কিশোর ছুটে এসে জমায়েত হতে থাকেন লাঠি খেলার জন্য নির্ধারিত স্থানে। এই অবসরে লাঠিয়ালগণ আয়োজকদের দেওয়া খানা-খাদ্য গ্রহণ করেন এবং খাদ্য গ্রহণের পর নির্ধারিত স্থানে মুখোমুখি হয়ে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে মূল লাঠি খেলা শুরুর ডাক ভাঙেন। এ সময় তারা ডাক ভাঙতে যে সব ধ্বনি ও বাক্য ব্যবহার করেন, তা হচ্ছে-“ও ও ও/তুমি যে কেমন বীর/তা জানবো আমি রে/ও ও ও।” এমন ভাষায় ডাক ভেঙে সকলে মিলে এক সঙ্গে মাটি ছুঁয়ে প্রণাম করে সাজ-পোশাক পরার জন্য একটি ঘরে ঢোকেন। এ সময় উঠানে পাটি বিছিয়ে একদল বাদ্যকার ঢোল, করতাল ও কাসার ঘড়া বা কলস বাজাতে শুরু করেন। এই সকল বাদ্য বাদনের মাঝখানে লাঠিয়ালগণ সাজ-পোশাকের মধ্যে বিভিন্ন রঙের হাতা-ওয়ালা ও স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে, সাদা রঙের ধুতি বা বর্ণিল ঘাঘরার মতো এক ধরনের বস্ত্র পরে, পায়ে ঘুঙুর বেঁধে, খালি পায়ে বিভিন্ন রঙের লাঠি হাতে খেলার মাঠে নেমে পড়েন। শুরুতে তারা সারি বেধে একটি বৃত্ত রচনা করে খেলার মাঠ প্রদক্ষিণ করেন। মাঠ প্রদক্ষিণ শেষে লাঠিয়ালরা একে একে তাদের হাতের লাঠি খেলার মাঠের কেন্দ্রবিন্দুর মাটিতে রেখে প্রণাম করেন এবং সে লাঠিকে পরক্ষণেই হাতে তুলে নিয়ে বাদ্যযন্ত্র ও বাদ্যযন্ত্রীদের প্রণাম করেন এবং খেলা শুরুর আগে আবার তারা উচ্চস্বরে ডাক ভাঙেন। তারপর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে দেহে, পায়ে ও হাতে ছন্দ তুলে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে নৃত্য পরিবেশন করেন, যা অনেকটা দৈহিক কসরতমূলক নৃত্য। লাঠি খেলার মূল আসর শুরুর আগেই এই নৃত্য বেশ আকর্ষণীয়। এক এক এলাকার লাঠি খেলার এই নৃত্যভঙ্গিতে যেমন বেশ বৈচিত্র্য চোখে পড়ে- তেমনি একই এলাকায় প্রচলিত লাঠি খেলার নৃত্যভঙ্গিতেও কিছু বৈচিত্র্য চোখে পড়ে বৈকি।

মন্তব্য