ইতিহাস হচ্ছে মানুষের অতীত ঘটনাবলী ও বিভিন্ন কার্যক্রম সংক্রান্ত পাঠ। ইংরেজি History শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ইতিহাস। History শব্দটি আবার এসেছে গ্রিক শব্দ Historia থেকে, যার অর্থ অতীত ঘটনা প্রবাহের অধ্যয়ন।
মানুষ হচ্ছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে সক্ষম প্রাণী। প্রতিনিয়ত কতো কাজই না করে তারা। ভালো কাজ, মন্দ কাজ। যুদ্ধ, ধংস, নির্মাণ, উদ্ভাবন- সব কিছুতেই পারদর্শী তারা। সেই আদিকাল থেকে তারা নানা কর্মকাণ্ড করে চলেছে। এসব ঘটনা প্রবাহের পদ্ধতিগত লিখিত রূপই হচ্ছে ইতিহাস।
সৃষ্টির প্রথমভাগে মানুষ আজকের মতো সভ্য ছিল না। কোনো প্রযুক্তির ছোঁয়া ছিল না। মানুষ বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াত। গুহায় বাস করতো। পশু শিকার ছিল তাদের প্রধান পেশা। সেখান থেকে মানুষ পশু পালন শিখেছে। নানা হাতিয়ারের উদ্ভাবন করেছে। চাষাবাদের প্রচলন হয়েছে। তারা আগুনের ব্যবহার শিখেছে। ঘরবাড়ি বানাতে শুরু করেছে। নদী তীরে জনপদ তৈরি হয়েছে। বন কেটে হয়েছে কৃষির প্রসার। পাহাড়ের উপরে নগর বানিয়েছে। গুহায় এঁকেছে নানা চিত্রকলা।
মানুষের বৈষয়িক বুদ্ধি যত বেড়েছে, ততই বেড়েছে স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও টানাপোড়েন। এক গোত্র আরেক গোত্রের কৃষিজমি, সম্পদ দখলে মরিয়া লড়াই করেছে। এক রাজ্য আরেক রাজ্যকে আক্রমণ করেছে। হয়েছে প্রাণঘাতি যুদ্ধ। অনেক জনপদ তাতে মাটিতে মিশে গেছে। অনেক শাসকের লোভ, বর্বরতা, অমানবিকতার কারণে নিজ রাজ্যের মানুষের জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে। আবার অনেক রাজা তার প্রজাদের কল্যাণে এমন সব ব্যবস্থা নিয়েছেন, যা তাদের অমর করে রেখেছে। এমন নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতা আজকের পর্যায়ে এসেছে।
কিন্তু মানবসভ্যতার এই ঘটনা প্রবাহের অনেক কিছু সম্পর্কেই মানুষের সুস্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। কারণ একটি সময় পর্যন্ত এসব ঘটনা কেউ লিখে রাখার তাগিদ অনুভব করেনি। তাই ওই সময়ের কোনো ইতিহাস নেই। ওই সময়কে তাই প্রাগ-ঐতিহাসিক সময় বলা হয়।
খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় পাঁচশ বছর আগে মানুষের সৃষ্ট বড় ঘটনাবলী লিখে রাখা শুরু হয়। এটি শুরু করেন গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাস (Herodotus)। তিনি ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দির মানুষ (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৪-আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪২৫)।
হেরোডোটাস মূলত গ্রিক ও পারসিয়ানদের মধ্যে তখন যে যুদ্ধ হয়েছিল সেই যুদ্ধের বর্ণনা দিয়ে একটি বই লিখেছিলেন। এই বইয়ের না দিয়েছিলেন হিস্ট্রি।
হেরোডোটাসের আগেও কেউ কেউ হয়তো কিছু ঘটনা লিখে রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেগুলো পদ্ধতিগতভাবে ঠিক ছিল না। হেরোডোটাসই প্রথম পদ্ধতিগতভাবে ঐতিহাসিক উপাদান সংগ্রহ করেন, সেগুলোর সূক্ষ্মতা নিরূপণে উদ্যমী উদ্যোগ নেন, এবং সেগুলোকে সঠিক ক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যায় বিন্যস্ত করেন। সেটিকে ভিত্তি করেই পরবর্তী সময়ে নতুন নতুন ইতিহাস রচিত হতে থাকে। আর সে কারণে হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক বলা হয়। তাকে প্রথম ইতিহাসের জনক হিসেবে আখ্যায়ত করেন রোমান আইনবিদ, ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক সিসেরো। পরে এটি সর্বজনীন স্বীকৃতি পেয়ে যায়।