আকাশে একটি রঙিন ঘুড়ি দেখলে কার না মনটা আনন্দে ভরে উঠে। ইচ্ছে করে কৈশোরে ফিরে যেতে। গাঁয়ের ছোট্ট নদীটির পাড়ে সবুজ ঘাসের মাঠে লাটাই নিয়ে কাটিয়ে দিতে সারাটা দিন।
গ্রামে যাদের শৈশব-কৈশোর কেটেছে, তাদের প্রায় সবারই ঘুড়ি উড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে। তাদের কেউ কেউ হয়ত দোকান থেকে কিনে উড়িয়েছে ঘুড়ি। কিন্তু বেশিরভাগই নিজে নিজে ঘুড়ি বানিয়েছে। আকার অনুযায়ী কাগজ কেটে, তাতে আঠা দিয়ে কয়েকটি বাঁশের চিকন কাঠি আটকে দিলেই হয়ে যায় ঘুড়ি।
এবার ঘুড়িকে বাঁধতে হবে সুতার সাথে। সুতার আরেক মাথা থাকবে লাটাইয়ে। ব্যস। হয়ে গেল। এখন শুধু ওড়ানোর অপেক্ষা। মৃদু বাতাসে খোলা মাঠে, নদীর ধারে বা ভবনের ছাদে উঠে ছেড়ে দিলেই উড়তে থাকবে সাইঁ সাইঁ করে।
ঘুড়ির ইতিহাস
ঘুড়ির ইতিহাস কিন্তু অনেক প্রাচীন। ঘুড়ি কোথা থেকে এল, কখন থেকে মানুষ ঘুড়ি উড়াচ্ছে তা সুনিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারে না। অনেকে বলে থাকেন, ৪০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে, তার মানে আজ থেকে প্রায় ২৪০০ বছর আগে গ্রীসের ট্যারাস্টাস শহরের আর্কিটাস নামে এক ভদ্রলোক প্রথম ঘুড়ি তৈরী করেছিলেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন ২০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে হান সিন নামে চীন দেশের এক সেনাপতিই প্রথম ঘুড়ি তৈরী করেন। তিনি ছিলেন হান সাম্রাজ্যের অধিপতি। চীনের ওয়ে ফ্যাং শহরে প্রথম ঘুড়ি ওড়ানো হয়েছিল।
ওই ঘটনার সম্মানে ওয়ে ফ্যাং শহরে একটি ঘুড়ি জাদুঘর তৈরি করেছে চীন সরকার। সেখানে ১৯৮৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়। আর ঘুড়ি খেলার আন্তর্জাতিক সংগঠন বিশ্ব ঘুড়ি ফেডারেশন (World Kite Federation) এর প্রধান কার্যালয়ও এ শহরে অবস্থিত।
ধারণা করা হয় চীন থেকেই ঘুড়ি তৈরি ও ওড়ানোর বিষয়টি জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপ বা আমেরিকায় ঘুড়ি ওড়ানোর রেওয়াজ থাকলেও সেটি এসেছে অনেক পরে।
চীনে প্রথমে সিল্ক কাপড় দিয়ে ঘুড়ি তৈরী করা হতো। কাগজ আবিষ্কারের পর সিল্কের জায়গা দখল করে নেয় কাগজ। এতে ঘুড়ি আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হয়।
ঘুড়ি কিভাবে ওড়ে
কাগজ বা কাপড় কেটে, কখনো আবার এ দুটো একসাথে মিলিয়ে ঘুড়ি বানানো হয়। ঘুড়িতে কিছু কাঠি ব্যবহার করা হয়। সেই কাঠির সাথে বাধা থাকে সুতা। ওড়ানোর সময় ঘুড়িকে সুতা দিয়ে মাটি থেকে নীচের দিকে টান দেওয়া হয়।বাতাসের গতির বিপরীত দিক থেকে ওড়াতে হয় ঘুড়ি। বাতাস ঘুড়িকে তার দিকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এই দুই দিকের টানে একটা ভারসাম্য তৈরি হয়। আর তার ওপর ভর করেই আকাশে ভেসে থাকে ঘুড়ি।
নানা রকম ঘুড়ি
এক সময় ঘুড়ি বলতেই মনে করা হতো চৌকোনা আকারের উড়ন্ত কিছু। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘুড়ির আকার আকৃতিতে এসেছে পরিবর্তন। মাছ, পাখি, ফুল, বাঘ, সিংহ, ড্রাগন, ব্যাঙ, সাপ-কতো আকৃতিরই না ঘুড়ি হচ্ছে এখন। বাদ যাচ্ছে না এলিয়েন পর্যন্ত। তাহলে দেখে নিই কিছু ব্যতিক্রমী ঘুড়ি-
মাছ ঘুড়ি-
প্রজাপতির ডানা
পাখি ঘুড়ি
ঘুড়ি উৎসব
পৃথিবীর অনেক দেশেই বর্তমানে ঘুড়ির উৎসব হয়। এসব উৎসবের মধ্যে যেমন আছে জাতীয় উৎসব, তেমনই আছে আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব। আর এসব উৎসবের বড় অংশই হয় সমুদ্র সৈকতে। আমরা বিভিন্ন দেশের ঘুড়ি উৎসবের কিছু ছবি দেখতে পারি। এ থেকেই বুঝা যাবে কতো বর্ণাঢ্য উৎসব এগুলো-
চীনা ঘুড়ি উৎসব-
ফিলিপিন ঘুড়ি উৎসব-
ম্যাঙ্গালোর ঘুড়ি উৎসব, ভারত
বালি ঘুড়ি উৎসব, ইন্দোনেশিয়া
ঘুড়ি উৎসব, মালয়েশিয়া